তৃতীয় অধ্যায়ঃ কর্মযোগ
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ
(মূল সংস্কৃত শ্লোক ও অনুবাদ)
তৃতীয় অধ্যায়ঃ কর্মযোগ
অর্জুন উবাচ
জ্যায়সী চেত্ কমৃনঃ তে মতা বুদ্ধিঃ জনার্দন ।
তত্ কিম্ কর্মানি ঘোওে মাম্ নিয়োজয়সি কেশব ।।১
অর্থ-অর্জুন বললেন-হে জনার্দন হে কেশব যদি তোমার মতে ভক্তি বিষয়ীনি বুদ্ধি কর্ম থেকে শ্রেয়তর হয় তাহা হলে কেন আমাকে ভয়ানক যুদ্ধে নিযুক্ত হওয়ার জন্য প্ররোচিত করছ।
ব্যামিশ্রেন ইব বাক্যেন বুদ্ধিম্ মোহয়সী ইব মে ।
তত্ একম্ বদ নিশ্চিত্য যে শ্রেয়ঃ অহম্ আপ্নুয়াম ।।২
অর্থ-তুমি যেন সন্দেহ জনক রুপে প্রতিয়মান বাক্যের দ্বারা আমার বুদ্ধি বিভ্রান্ত করছ। তাই দয়া করে আমাকে নিশ্চিত ভাবে বল কোনটি আমার পক্ষে সব চেয়ে শ্রেয়স্কর।
ভগবান উবাচ
লোকে অস্মিন দ্বিবিধা নিষ্ঠা পুরা পোক্তা ময়া অনঘ ।
জ্ঞান যোগেন সাংখ্যানাম কর্মযোগেন যোগিনাম্ ।।৩
অর্থ-ভগবান বললেন-হে অর্জুন আমি ইতিপুর্বে ব্যাখ্যা করেছি যে দুই প্রকার মানুষ অধ্যাত্মচেতনা উপরব্ধি করতে চেষ্টা করে।আর কিছু লোক দার্শনিক জ্ঞানের আলাচনার মাধ্যমে নিজকে জানতে চান এবং অন্যেরা আবার তা ভক্তির মাধ্যমে জানতে চান।
ন কর্মনাম্ অনারম্ভাত্ নৈস্কর্মম্ পুরুষঃ অশ্নুতে ।
ন চ সন্ন্যসনাত্ এব সিদ্ধিম্ সমধিগচ্ছতি ।।৪
অর্থ-কেবল কর্ম অনুষ্ঠান না করার মাধ্যমে কর্ম বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া যায় না আবার কর্ম ত্যাগের মাধ্যমেও কেবল সিদ্ধি লাভ করা যায় না।
ন হি কশ্চিত্ ক্ষনম্ অপি জাতু তিষ্টতি অকর্মকৃত্ ।
কার্যতে হি অবশঃ কর্ম সর্বঃ প্রকির্তিজৈঃ গুনৈ ।।৫
অর্থ-সকলেই অসহায় ভাবে মায়াজাত গুন সমুহের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কর্ম করতে বাধ্যহয় তাই কর্ম না করে ক্ষনকাল থাকতে পারে না।
কর্মেন্দ্রিয়ানি সংযম্য যঃ আস্তেঃ মনসা স্মরন ।
ইন্দ্রিয়ার্থান বিমুঢ় আত্মা মিথ্যাচারঃ স উচ্যতে ।।৬
অর্থ-মুঢ় ব্যক্তি পঞ্চ কর্ম ইন্দ্রিয় সংযত করেও মনে মনে শব্দ রসাদি ইন্দ্রিয়গুলি স্বরন করে সে অবশ্যই নিজকে বিভ্রান্ত করে এবং তাকে মিথ্যাচারি ভন্ড বলা হয়।
যঃ তু ইন্দ্রিয়ানি মনসা নিয়ম্য আরভতে অর্জুন ।
কর্মেন্দ্রিয়ৈঃ কর্ম যোগম্ অসক্তঃ সঃ বিশিষ্যতে ।।৭
অর্থ-কিন্তু যিনি মনের দ্বারা ইন্দ্রিয়গুলিকে সংযত করে অনাসক্ত ভাবে কর্ম অনুষ্ঠান করেন তিনি পুর্বক্ত মিথ্যাচারি অপেক্ষা অনেক গুনে শ্রেষ্ঠ।
নিয়তম্ কুরু কর্ম ত্বম কর্ম জ্যয়াঃ হি অকর্মনঃ ।
শরির যাত্রা অপি চ তে ন প্রসিদ্ধ্যেত্ অকর্মনঃ ।।৮
অর্থ-তুমি শাস্ত্রক্তো কর্ম অনুষ্ঠান কর কেননা কর্মত্যাগ থেকে কর্ম অনুষ্ঠা শ্রেয়। কর্ম না করে কেউ দেহযাত্রা নির্বাহ করতে পারে না।
যজ্ঞার্থাত্ কর্ম নত্ অন্যত্র লোকঃ অয়ম্ কর্ম বন্ধনঃ ।
তত্ অর্থম কর্ম কৌন্তেয় মুক্তসংঙ্গঃ সমাচর ।।৯
অর্থ-বিষ্ণুর প্রতি সম্পাদন করার জন্য কর্ম করা উচিত্ তা নাহলে কর্ম জীবকে জড় জগতের বন্ধনে আবদ্ধ করে। তাই হে কৌন্তেয় ভগবানের সন্তুষ্টি বিধানের জন্যই কেবল তোমার কর্ত্যব্য অনুষ্ঠান কর এবং তার ফলে তুমি সদা সর্বদা জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।
সহ যজ্ঞাঃ প্রজাঃ সৃষ্টা পুরা উবাচ প্রজাপতিঃ ।
অনেন প্রসবিধ্বম এষঃ বঃ অস্তু ইষ্ট কামাধূক ।।১০
অর্থ-সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান যজ্ঞ সহ প্রজা সৃষ্টি করে বলেছিলেন এই যজ্ঞের দ্বারা তোমরা সর্বদা সমৃদ্ধ হও এই যজ্ঞ তোমাদের সমস্ত অভীষ্ট পুরন করবে।
দেবান ভাবয়তা অনেন তে দেবাঃ ভাবয়ন্তু বঃ ।
পরস্পরম্ ভবয়ন্তঃ শ্রেঃয় পরম্ অবাপ্সথ ।।১১
অর্থ-তোমাদের যজ্ঞ অনুষ্ঠানে প্রীত হয়ে দেবতারা তোমাদের প্রীতি সাধন করবেন। এইভাবে পরস্পরের প্রীতি সম্পাদন করার মাধ্যমে তোমরা পরম মঙ্গল লাভ করবে।
ইষ্টান ভোগান হি বঃ দেবাঃ দাস্যন্তে যজ্ঞ ভাবিতাঃ ।
তৈঃ দত্তান অপ্রদায় এভ্যঃ যঃ ভূঙক্তে স্তেনঃ এব সঃ ।।১২
অর্থ-যজ্ঞের ফলে সন্তুষ্ট হয়ে দেবতারা তোমাদের প্রতি বাঞ্চিত ভোগ্যবস্তু প্রদান করবেন। সুতরাং দেবতাদের দেওয়া বস্তু তাদের নিবেদন না করে যিনি ভোগ করেন তিনি নিশ্চয় চোর।
যজ্ঞশিষ্ট অশিনঃ সন্তঃ মুচ্যতে সর্ব কিল্বষৈঃ ।
ভূঞ্জতে তে তু অঘম্পাপাঃ যে পচন্তি আত্মকারণাত্ ।।১৩
অর্থ-ভগবান ভক্তরা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন কারন তারা ভগবানকে নিবেদন করে অন্নাদি গ্রহন করেন। যারা কেবল সার্থপর হয়ে নিজেদের ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য অন্নপাক করে তারা কেবল পাপ ভোজন করে।
অন্নাত্ ভবন্তি ভূতানি পর্জন্যাত্ অন্ন সম্ভবঃ ।
যজ্ঞাত্ ভবতী পর্জন্যঃ যজ্ঞঃ কর্ম সমুদ্ভব ।।১৪
অর্থ-অন্ন খেয়ে প্রাণীগন জীবন ধারন করেন, বৃষ্টি হওয়ার ফলে অন্ন উত্পাদন হয়, যজ্ঞ অনুষ্ঠান করার ফলে বৃষ্টি হয়, শাস্ত্রক্ত কর্ম থেকে যজ্ঞ উত্পন্ন হয়।
কর্ম ব্রহ্ম উদ্ভবম্ বিদ্ধি ব্রহ্ম অক্ষর সমুদ্ভবম্ ।
তস্মাত্ সর্বগতম্ ব্রহ্ম নিত্যম্ যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিতম্ ।।১৫
অর্থ-যজ্ঞাদি কর্ম বেদ থেকে উদ্ভব হয়েছে এবং বেদ অক্ষর ভগবান থেকে প্রকাশিত হয়েছে। অতএব সর্বব্যপক ব্রহ্ম সর্বদা যজ্ঞে প্রতিষ্টিত আছেন।
এবম্ প্রবর্তিতম্ চক্রম্ ন অনুবর্তয়তি ইহ যঃ ।
অঘায়ূঃ ইন্দ্রিয়ারামঃ মোঘম্ পার্থ সঃ জীবতী ।।১৬
অর্থ-হে অর্জুন যে ব্যক্তি এই প্রকারে ভগবান কতৃক প্রবর্তিত যজ্ঞ অনুষ্ঠানের পন্থা অনুস্বরন করে না, সেই ইন্দ্রিয় সুখপরায়ন পাপী ব্যক্তি বৃথা জীবন ধারন করে।
যঃ তু আত্মরতিঃ এব স্যাত্ আত্মতৃপ্তঃ চ মানবঃ ।
আত্মনি এব চ সনতুষ্টঃ তস্য কার্য্যম্ ন বিদ্যতে ।।১৭
অর্থ-যে ব্যক্তি আত্মাতে প্রীত আত্মাতেই তৃপ্ত আত্মতেই সন্তুষ্ট তার কোন কর্তব্য নেই।
ন এব তস্য কৃতেন অর্থ ন অকৃতেন ইহ কশ্চন ।
ন চ তস্য সর্ব ভূতেষু কশ্চিত্ অর্থ ব্যপাশ্রয়ঃ ।।১৮
অর্থ-আত্মনন্দ অনুভবকারি ব্যক্তির ইহজগতে ধর্ম অনুষ্ঠানের কোন প্রয়োজন নেই, এবং কর্ম না করারও কোন কারন নেই।তাকে অন্য কোন প্রাণীর উপর নির্ভর করতেও হয় না।
তস্মাত্ অসক্তঃ সততম্ কার্যম্ কর্ম সমাচর ।
অসক্তঃ হি আচরন কর্ম পরম্ আপ্নোতি পুরুষঃ ।।১৯
অর্থ-অতএব কর্মফলের প্রতি আসক্তি রহিত হয়ে কর্তব্য কর্ম সম্পাদন কর, অনাসক্ত হয়ে কর্ম করার ফলেই পরা ভক্তি লাভ করা যায়।
কর্মনা হি সংসিদ্ধিম্ আস্থিতাঃ জনকাদয়ঃ ।
লোক সংগ্রহম্ এব অপি সংপশ্যন কর্তুম্ অর্হসি ।।২০
অর্থ-জনক প্রভৃতি মহারাজরাও কর্ম দ্বারা ভক্তিরুপ সংসিদ্ধি প্রাপ্তি হয়েছিল,অতএব জনসাধারনকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তোমার কর্ম করা উচিত্।
যত্ যত্ আচরতি শ্রেষ্ঠ তত্ তত্ এব ইতর জনঃ ।
সঃ যত্ প্রমানম্ কুরুতে লোকঃ তত্ অনুবর্ততে ।।২১
অর্থ-শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরা যে ভাবে আচরন করেন সাধারন মানুষেরাও তার অনুকরন করেন। তিনি যা প্রমান বলে স্বীকার করেন অন্য লোকে তারই অনুকরন করে।
ন মে পার্থ অস্তি কর্তব্যম্ ত্রিষু লোকেষু কিঞ্চন ।
ন অনবাপ্তম্ অবাপ্তব্যম্ বর্ত এব চ কর্মণি ।।২২
অর্থ-হে পার্থ এই ত্রিজগতে আমার কিছুই কর্তব্য নেই। আমার অপ্রাপ্ত কিছু নেই এবং প্রাপ্তব্যও কিছু নেই তবুও আমি কর্মে ব্যপৃত আছি।
যদি হি অহম্ ন বর্তেয়ম্ জাতু কর্মনি অতন্দ্রিতঃ ।
মম্ বর্ত্ম অনুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ ।।২৩
অর্থ-হে পার্থ আমি যদি অলস হয়ে শুভকর্মে প্রবৃত্ত না হই তবে আমার অনুবর্তি হয়ে সমস্ত মানুষই কর্ম ত্যাগ করবে।
উত্সীদেয়ু ইমে লোকাঃ ন কুর্যাম্ কম চেত্ অহম্ ।
সঙ্করস্য চ কর্তা স্যাম উপহন্যাম্ ইমে প্রজাঃ ।।২৪
অর্থ-আমি যদি কর্ম না করি সমস্ত লোক উত্সন্ন হবে। আমি বর্নসঙ্কর আদি সামাজিক বিশৃঙ্খলার কারন হব এবং তার ফলে সমস্ত প্রজা বিনষ্ট হবে।
সক্তা কর্মনি অবিদ্ধাংসঃ যথা কুর্বন্তি ভারত ।
কুর্যাত্ বিদ্ধান তথা অসক্তঃ চিকীর্ষুঃ লোক সংগ্রহম্ ।২৫।
অর্থ-হে ভারত অজ্ঞানিরা যেমন কর্ম ফলের প্রতি আসক্ত হয়ে তাদের কর্তব্য কর্ম করে তেমনী জ্ঞানিরা অনাসক্ত হয়ে প্রকৃত পথে মানুষকে পরিচালিত করার জন্য কর্ম করেন।
ন বুদ্ধি ভেদম্ জনয়েত্ অজ্ঞানাম্ কর্মসংঙ্গিনাম্ ।
জোযয়েত্ সর্ব কর্মানি বিদ্বান যুক্তঃ সমাচরম্ ।।২৬
অর্থ-জ্ঞানবান ব্যক্তিরা কর্মাসক্ত জ্ঞানহীন ব্যক্তিদের বুদ্ধি বিভ্রান্ত করে ন। তারা ভক্তিযুক্ত চিত্তে সমস্ত কর্ম অনুষ্ঠান করে জ্ঞানহীন ব্যক্তিদের কর্মে প্রবৃত্তি করে।
প্রকৃতেঃ ক্রিয়া মানানি গুনৈঃ কর্মানি সর্বশঃ ।
অহংঙ্কার বিমুঢ় আত্মা কর্তা অহম্ ইতি মন্যতে ।।২৭
অর্থ-মোহাচ্ছন্ন জীব প্রাকৃত অহংঙ্কার বশত জড়া প্রকৃতির ত্রিগুন দ্বারা ক্রিয়মান সমস্ত কার্য্যকে স্বীয় কার্যবলে মনে করে আমি কর্তা এই রকম অভিমান করে।
তত্তবিত্ তু মহাবাহো গুনকর্ম বিভাগয়োঃ ।
গুনাঃ গুনেষু বর্তন্তে ইতি মত্বা ন সজ্জতে ।।২৮
অর্থ-হে মহাবাহো তত্তজ্ঞ ব্যক্তি ভগবদ্ভক্তিমুখী কর্ম এবং সকাম কর্মের পার্তক্য ভালভবে অবগত হয়ে কখনো ইন্দ্রিয় সুখ ভোগাত্মক কার্য্যে প্রবৃত্ত হন না।
প্রকৃতৈঃ গুন সংমূঢ়া সজ্জন্তে গুনকর্মষু ।
তান অকৃত্স্নবিদঃ মন্দান্ কৃত্স্নবিত্ ন বিচাল্যতে ।।২৯
অর্থ-জড়া প্রকৃতির ত্রিগুনের দ্বারা মোহাচ্ছন্ন হয়ে অজ্ঞান ব্যক্তিরা জাগতিক কার্য্য কলাপে প্রবৃত্ত হয়। কিন্তু তাদের সেইকর্ম নিকৃষ্ট হলেও তত্তজ্ঞানি পুরুষেরা তাদের বিচলিত করে না।
ময়ি সর্বানি কর্মানি সংনস্য অধ্যাত্ম চেতসা ।
নিরাশীঃ নির্মমঃ ভূত্বা যুধ্যস্য বিগতজ্বরঃ ।।৩০
অর্থ-হে অর্জুন তোমার সমস্ত কর্ম আমাকে সমর্পন করে আধ্যত্ম চেতনা সম্পন্ন হয়ে মমতা শুন্য নিস্কাম ও শোক শুন্য হয়ে যুদ্ধ কর।
যে মে মতম্ ইদম্ নিত্যম অনুতিষ্ঠন্তি মানবাঃ ।
শ্রদ্ধাবন্ত অনুসুয়ন্ত মূচ্যন্তে তে অপি কর্মভিঃ ।।৩১
অর্থ-আমার নির্দ্দেশ অনুসারে শ্রদ্ধাবান এবং মাত্সর্য রহিত যিনি তার কর্তব্যকর্ম অনুষ্ঠান করেন, তিনি কর্ম বন্ধন থেকে মুক্তহন।
যে তু অভ্যসুয়ন্ত ন অনুতিষ্ঠন্তি মে মতম্ ।
সর্বজ্ঞান বিমূঢ়ান তান বিদ্ধি নষ্টান অচেতসাঃ ।।৩২
অর্থ-কিন্ত যারা অসুয়া পুর্বক আমার এই উপদেশ পালন করে না তাদের সমস্ত জ্ঞান থেকে বঞ্চিত বিমূঢ় এবং পরমার্থ লাভের সকল প্রচেষ্টা থেকে ভ্রষ্ট বলে জানবে।
সদৃশম্ চেষ্টতে সস্ব্যাঃ প্রকৃতেঃ জ্ঞানবান অপি ।
প্রকৃতিম্ যান্তি ভূতানি নিগ্রহঃ কিম্ করিষ্যতি ।।৩৩
অর্থ-গুনবান ব্যক্তিও তার প্রকৃতি অনুসারে কার্যকরেন কারন সকলেই তাদের স্বীয় স্বভাবকে অনুগমন করেন। সুতরাং দমন করে কি লাভ হবে?
ইন্দ্রিয়স্য ইন্দ্রিয়স্যার্থে রাগ দেষৌ ব্যবস্থিতৌ ।
তয়োঃ ন বশম্ আগচ্ছেত্ তৌ হি অস্য পরিপন্থিনৌ ।।৩৪
অর্থ-সমস্ত জীবই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুতে আসক্তি অথবা বিরক্তি অনুভব করে, কিন্তু এইভাবে ইন্দ্রিয় এবংইন্দ্রিয়ের বিষয়ের বশীভুত হওয়া উচিত্ নয়, কারন তা পারমার্থিক প্রগতির পথে প্রতিবন্ধক।
শ্রেয়ান স্বধর্মঃ বিগুনঃ পরধর্মাত্ স্বনুষ্ঠিতাত্ ।
স্বধর্মে নিধনম্ শ্রেয়ঃ পরধর্মঃ ভয়বহঃ ।।৩৫
অর্থ-স্বধর্মের অনুষ্ঠান দোষযুক্ত হলেও উত্তমরুপে অনুষ্ঠিত পরধর্ম থেকে উত্কৃষ্ট। স্বধর্ম সাধনে যদি মৃত্যু হয় তাও মঙ্গল জনক কি অন্যের ধর্মের অনুষ্ঠান করা বিপদ জনক।
অর্জুন উবাচ
অথ কেন প্রযুক্ত অয়ম্ পাপম্ চরতি পুরুষ ।
অনিচ্ছন অপি বাঞ্চেয় বলাত্ ইব নিয়োজিত ।৩৬।
অর্থ-অর্জুন বললেন হে বার্ঞ্চেয়, মানুষ কারদ্বারা চালিত হয়ে অনিচ্ছা সত্তেও যেন বলপুর্বক নিয়োজিত হয়েই পাপাচারনে প্রবৃত্তহয়?
ভগবান উবাচ
কাম এষঃ ক্রোধ এষঃ রজোগুন সমুদ্ভবম্ ।
মহাশনঃ মহাপাপ্না বিদ্ধি এনম্ ইহ বৈরিনম্ ।৩৭।
অর্থ-ভগবান বললেন হেঅর্জুন রজোগুন থেকে কাম মানুষকে এই পাপে প্রবৃত্ত করে এবং এই কামই ক্রোধে পরিনত হয়। কাম হল সর্বগ্রাসী এবং পাপাত্মক; কামকেই জীবনের প্রধান শত্রু বলে জানবে।
ধুমেন আব্রিয়তে বহ্নিঃ যথা আদর্শঃ মলেন চ ।
যথা উল্বেন আবৃতঃ গর্ভঃ তথা তেন ইদম আবৃতম্ ।৩৮।
অর্থ-অগ্নি যেমন ধুমদ্বরা আবৃত থাকে এবং দর্পন যেমন ময়লার দ্বারা আবৃত থাকে অথবা গর্ভ যেমন জরায়ুদ্বারা আবৃত্ত থাকে তেমনই জীব সত্ত্বা বিভিন্ন মাত্রায় এই কামের দ্বারা আবৃত্ত থাকে।
আবৃতম্ জ্ঞানম এতেন জ্ঞানিনঃ নিত্য বৈরিনা ।
কামরুপেন কৌন্তেয় দুস্পুরেন অনলেন চ ।৩৯।
অর্থ-কামরুপি চিরশত্রু দ্বারা মানুষের শুদ্ধ চেতনা আবৃত্ত। এই কাম দুর্বারিত অগ্নির মত চির অতৃপ্ত।
ইন্দ্রিয়ানি মন বুদ্ধিঃ অস্য অধিষ্ঠানম্ উচ্যতে ।
এতৈঃ বিমোহয়তি এষঃ জ্ঞানম আবৃত্য দেহিনম্ ।৪০।
অর্থ-ইন্দ্রিয় সমুহ মন এবং বুদ্ধি এই কামের আশ্রয়স্থল যার মাধ্যমে কাম জীবের প্রকৃত জ্ঞানকে আচ্ছন্ন করে তাকে বিভ্রান্ত করে।
তস্মাত্ ত্বম্ ইন্দ্রিয়ানি আদৌ নিয়ম্য ভরতর্ষভ ।
পাপমানম্ প্রজাহি হি এনম্ জ্ঞন বিজ্ঞান নাশনম্ ।।৪১
অর্থ-অতএব হে ভারত শ্রেষ্ট তুমি প্রথমে ইন্দ্রিয়গুলিকে নিয়ত্রিত করার মাধ্যমে জ্ঞান বিজ্ঞান নাশক পাপের প্রতিক রুপ কামকে বিনাশ কর।
ইন্দ্রিয়ানি পরানি আহুঃ ইন্দ্রিয়েভ্যঃ পরম্ মনঃ ।
মনসঃ তু পরা বুদ্ধিঃ যঃ বুদ্ধেঃ পরতঃ তু সঃ ।।৪২
অর্থ-স্থুলজড় পদার্থের থেকে ইন্দ্রিয়গুলি শ্রেয়,ইন্দ্রিয়ের থেকে মন শ্রেয় মন থেকে বুদ্ধি শ্রেয় এবং তিনি (আত্মা) সেই বুদ্ধি থেকেও শ্রেয়।
এবম্ বুদ্ধেঃ পরম বুদ্ধা সংস্তভ্য আত্মনম্ আত্মনা।
জহী শত্রুম্ মহাবাহো কামরুপম্দুরাসদম্।। ৪৩।
অর্থ-হে মহাবির অর্জুন নিজেকে জড় ইন্দ্রীয়,মন এবং বুদ্ধির অতীত জেনে চিত্শক্তির দ্বারা নিকৃষ্ট বৃত্তিকে সংযত করে কামরুপ দুর্জয় শত্রুকে জয় কর।
ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে
কর্মযোগো নাম তৃতীযোঽধ্যাযঃ ॥৩॥